প্রত্যয় লন্ডন ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে করোনার ভারতীয় ধরন যে হারে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন ব্রিটিশ সরকার। সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রয়োজনে স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বরিস জনসন অবশ্য একটি অনুষ্ঠানে গতকাল জানিয়েছেন, স্থানীয় ভাবে কিছু কিছু অঞ্চলে ফের লকডাউন করা হতে পারে। আজ যুক্তরাজ্য সময় বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলনে বরিস জনসন ভারতীয় ধরন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা বলবেন।
লন্ডন এবং ইংল্যান্ডের উত্তরে বেশ কিছু শহরে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্ট। বিষয়টি নিয়ে সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজ়রি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সিস এর অধ্যাপক অ্যাডাম ফিন জানান, সত্যিই চিন্তা বাড়িয়েছে ভারতীয় স্ট্রেন। এটির সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পর্কে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড’-এর একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করার কথা শীঘ্রই। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্টে আক্রান্তের সংখ্যা এক সপ্তাহে দ্বিগুনের বেশী হয়েছে যুক্তরাজ্য।
এই স্ট্রেনটি রুখতে ভ্যাকসিন কতটা কাজ দিচ্ছে, তা নিয়েও সন্দিহান বিশেষজ্ঞেরা। কারণ ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ় নিয়েও মৃত্যুর খবর মিলছে ভারতে।
সম্প্রতি ২ জন আমেরিকান ফাইজারের দুই ডোজ টিকা নিয়ে ভারত ভ্রমনে যান, তার পরেও এই দুই জন ভারতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হন এবং মারা যান।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই অবস্থায় শুধু মাত্র টিকাকরণের জোরদারের ভরসায় লকডাউন তুলে দেওয়া বিপদে ফেলতে পারে যুক্তরাজ্যরে। এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত বিদেশ ফেরত পর্যটকদের জিনোমিক তথ্য সিকোয়েন্স করে ওয়েলকাম’স সেঙ্গার ইন্সস্টিটিউট জানিয়েছে, ৬ শতাংশ ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত। এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৭ হাজার নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, যুক্তরাজ্য করোনা সংক্রমণ মার্চের তুলনায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় ধরনে সংক্রমণ সংখ্যায় দ্রুত বাড়ছে। অন্য একটি গবেষণায় ইম্পিরিয়ালের গবেষক দল ১১৫টি পজ়িটিভ রিপোর্ট পান। তার মধ্যে ২৬টি নমুনার ভ্যারিয়্যান্ট চিহ্নিত করা যায়। এর মধ্যে ২৪টি কেন্ট ভ্যারিয়্যান্ট। বাকি দু’টি ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্ট। কিন্তু আক্রান্ত দু’জনের কেউই লন্ডন ছেড়ে অন্য কোথাও যাননি। অর্থাৎ, তাঁরা লন্ডনেই সংক্রমিত হয়েছেন।
ভ্যারিয়্যান্টটি লন্ডনে ছড়াতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এখনও এই স্ট্রেনে সংক্রমিতের সংখ্যা কম। কিন্তু সব মিলিয়ে ভারতের দিকে তাকালে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্নতা রয়ে গিয়েছে।
ম্যাট হ্যানকক বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজন হলে আরও পদক্ষেপ নিতে দেরি করা হবে না।’
এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও প্রয়োজনে পুনরায় আঞ্চলিক বিধিনিষেধ আরোপের সম্ভাবনা উড়িয়ে না দিয়ে বলেছিলেন, ‘এই ভ্যারিয়্যান্ট নিয়ে আমরা উদ্বেগের মধ্য রয়েছি।’
তবে, তার মানে এই নয় যে, বিধিনিষেধ শিথিল করার পূর্বপরিকল্পনা থেকে ইংল্যান্ডের সরে আসার প্রয়োজন পড়বে, বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্যে আগামী ১৭ মে বিধিনিষেধে বড় ধরনের শৈথিল্যের কথা রয়েছে।